বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের অনুপাত কমানোর সম্ভাব্য সুপারিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে ‘সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান’ ঘটবে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তারা প্রতিবেদন জবা দেবেন ইনশাল্লাহ। এটা জমা দেওয়ার পর সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না, এটা স্পষ্ট। প্রতিবেদনটা এখন একটা পর্যায়ে এসেছে। কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে বলেও জানান তিনি।
ক্ষমতার পালাবদলের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্র্বতী সরকার। প্রথম ধাপে যে ছয় খাতের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়, তার মধ্যে জনপ্রশাসন একটি। কমিশনের প্রধান হিসেবে আছেন আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, উপসচিবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। এই অনুপাতে পরিবর্তন এনে প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হবে। সম্ভাব্য এই সুপারিশের কথা জানার পর আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে জনপ্রশাসন সচিব এর সঙ্গে বৈঠক করে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মূল কথা হল, কমিশন এর আগে আরও ২৩টা হয়েছে, এটা ২৪তম কমিশন। এর কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে বসা হয়েছে। এখন প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে বসার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসবে কমিশন। এরপর কারো মধ্যে তথ্যগত কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। ভুল বোঝাবুঝির অবসান কীভাবে হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আপনাদের ৪০টি মিডিয়া রয়েছে আমি একটা কথা বলেছি। তবে ৪০টি মিডিয়া যার যে-রকম চিন্তা-চেতনা সে সেরকম করে প্রচার করলো। কিন্তু বিষয় একটাই। আসলে ভুল বোঝাবুঝি এটাই। তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে যে কেউ কমিশনকে তথ্য ও সুপারিশ দিতে পারেন। রোববারও তারা কিছু সুপারিশ পেয়েছেন। সরকারকে স্থিতিশীল রেখে জনগণের স্বার্থে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাতে এগোনো যায় সেটাই তাদের লক্ষ্য। প্রশাসন ক্যাডারের বিক্ষোভের বিষয়ে এক সাংবাদিক সচিবের কাছে জানতে চান, সরকারি আইন বা বিধি অনুযায়ী কেউ এভাবে বিক্ষোভ দেখাতে পারে কিনা? জবাবে সচিব বলেন, বিএএসএ একটা সংগঠন; তারা তার এখানে এসেছেন। তারা হয়ত দল বেঁধে এসেছে। এটা একটি পজেটিভ স্টেপ।
বিএএসএ সভাপতি আনোয়ার উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে দুই মন্ত্রণালয়ের ৩০০ কর্মকর্তা আছেন। এটা একটা শোভনীয় পন্থা, এটাকে ওইভাবে দেখবেন না। তাদের সার্ভিসের মধ্যে অন্য কেউ আসবেন না, তারাও কোথাও যাবেন না। একটা সহজ হিসাব, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন; ১৯টা সাবজেক্ট আপনাকে দেয়া হয়েছিল। আপনি দুই বছর পর যদি বলেন, আমি সয়েল সায়েন্সে ছিলাম, এখন বায়ো কেমেস্ট্রিতে যাব। এটা কি যৌক্তিক? তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিশন। যে কমিশনের মাধ্যমে মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত। সেই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের যদি ক্যারিয়ার না থাকে তাহলে তাদের মন খারাপ থাকতেই পারে। দীর্ঘদিন পর এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দেশ স্বাধীনের পর অনেক কমিশন হয়েছে তারা সুপারিশও করেছেন। ২০২৪ সালে এসে এই কমিশনটি কাজ করছে। গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের কিছু কথা মিডিয়াতে আসায় তারা মনে করছেন কিছু তথ্য কমিশনকে দেওয়া দরকার। সে কারণেই তারা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আরও একবার বসার সুযোগ চেয়েছেন।
১৯৭৫ সালের সার্ভিস অ্যাক্টে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতির বিধান ছিল। উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য প্রথমে ২৫ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ৭৫ শতাংশ কোটা রেখে বিধিমালা জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।