বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারী করোনা ভাইরাসের আতংকে টানা প্রায় ৭৮ সপ্তাহ এবং ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূখোমুখি হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মূখরিত শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবক সবাই খুশি। এটি ছিল সকলের প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষতি যেন শিক্ষকরা পুষিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তেমনটাই মনে করেন অনেকেই।মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ বন্ধের পর ১২ সেপ্টম্বর সারা দেশে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ।
এ উপলক্ষ্যে রবিবার সকালে ময়মনসিংহের অন্যতাম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ পরিদর্শন করে দেখা যায়, শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ করোনা স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান।
স্কুলে প্রবেশের প্রথমেই থার্ম্যাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্র মাপা হয়, এরপর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়ে, সাবান পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেখানে দু’হাত ধুয়ে ক্লাসে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
এসব কাজে শিক্ষরা জড়িত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ময়মনসসিংহ নগরী ও ত্রিশাল এবং ভালুকা উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে স্কুলটিতে ছিল ভিন্ন আয়োজন। বেলুন দিয়ে বানানো হয়েছে গেট, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে অভ্যর্থনা। এতদিন পর বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের এমন আয়োজন বাড়তি আনন্দ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।
গফরগাঁওেয়র পাগলা থানাধীন কান্দিপাড়া আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যায়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল আলম মারুফ বলেন, এত দিন পর স্কুলে এসে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। বন্ধ থাকাকালীন আমাদের অন্য রকম এক মানসিকতা ছিল, আজ নিজের ভেতরে প্রফুল্লতা ফিরে পেলাম। স্কুলে এসে স্যার-ম্যামদের কাছ থেকে এমন সারসাইজ পাব, তা ভাবতে পারিনি।
গফরগাঁওয়ের আরেক স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কান্দিপাড়া নতুন বাজার জনতা আদর্শ বিদ্যানিকেতনে লাইন ধরে ঢোকানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের । তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে। দূরত্ব বজায় রেখে বেঞ্চে বসানো হয়েছে।
স্কুলের ছাত্র সানাউল্লাহ বলেন, সবকিছুই যেন নতুন মনে হচ্ছে। এখন পড়ায় মন বসবে। অনলাইন ক্লাস করতেও মনটা এই ক্লাসরুমেই পড়ে থাকত। খুব মিস করতাম বন্ধুদের। অবশেষে আজ স্যার-বন্ধুদের কাছে পেয়েছি। আমরা খুবই আনন্দিত।কথা হয় এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গেও। ছেলে-মেয়েদের স্কুলমুখী করতে পেয়ে খুশি তারাও।
এক অভিভাবক বলেন, দেশে সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু আমরা এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছি, ছেলে-মেয়েরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তাদের কিছুই হবে না।
বাঘেরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে বসানো হচ্ছে। তাদের মনকে উৎফুল্ল রাখার জন্য খেলাধুলারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিফট ভাগ করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
আগে চার শিফটে ক্লাস করানো হলেও এখন আট শিফট করা হয়েছে।শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফেরায় যে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই খুশি, তা নয়। একই রকম উচ্ছ্বাস কর্মচারীদেরও মাঝেও। অনুভূতি জানতে চাইলে এক আয়া বলেন, এতদিন স্কুলটিতে ছিল শুধুই শূন্যতা।
সব সময় ছাত্রীদের জন্য মন পুড়েছে। আজ আবার তাদের পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। তাদের ছাড়া তো কিছু ভালো লাগে না।কান্দিপাড়া স্কুলের সামনে গত সাত বছর ধরে চটপটি ও জালমুড়ি বিক্রি করেন এক বিক্রেতা ।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করেই ছুটে আসত তার দোকানে। কিন্তু গত দেড় বছরের বেশি সময় তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি বলেন, এত দিন ব্যবসায়ও খারাপ অবস্থা ছিল। আজ আবার তারা আসছে। আমারও খুব খুশি লাগছে।
জানা গেছে, জেলায় ২ হাজার ১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫ জন। এ ছাড়াও মাধ্যমিক ৬৬৫টি ও উচ্চমাধ্যমিক ৭৭টি বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে ৩৮৮টি। প্রায় ১২ লাখের মতো শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে ক্লাসে ফিরবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: সাংবাদিক এ.. আর এস.দ্বীনমোহাম্মদ